ঢাকা,বৃহস্পতিবার, ২৬ ডিসেম্বর ২০২৪

আমিন আমিন ধ্বনিতে মুখরিত চুনতির সীরত ময়দান

sonati লোহাগাড়া প্রতিনিধি :
আশেকে রাসুল (সঃ) অলিকুল শিরোমনি মোজাদ্দেদে মাহফিলে সীরতুন্নবী (সঃ) প্রখ্যাত আলেমেদ্বীন হযরত আলহাজ্ব শাহ মাওলানা হাফেজ আহমদ (রাঃ আঃ) শাহ সাহেব কেবলা চুনতি কর্তৃক প্রবর্তিত ঐতিহ্যবাহী লোহাগাড়ার চুনতি সীরত ময়দানে ১৯ দিনব্যাপী সীরতুন্নবী (সঃ) মাহফিলের আখেরী মোনাজাতে গত বৃহস্পতিবার ১৯তম দিনে মানুষের ঢল নেমেছে। দেশের বিভিন্ন এলাকার ধর্মপ্রাণ মুসল্লীরা আখেরী মোনাজাতে অংশগ্রহণ করেছেন। বৃহস্পতিবার দিবাগত রাত ও শুক্রবার ফজরের আগ মূহুর্তে আখেরী মোনাজাত অনুষ্ঠিত হয়। আখেরি মোনাজাত পরিচালনা করেন অধ্যাপক হাফেজ মাওলানা শহিদুল ইসলাম বারাকাতী সাহেব। আখেরী মোনাজাতে ধর্ম, বর্ণ নির্বিশেষে সকলের জন্য দোয়া চেয়েছেন। মায়ানমারে রাখাইন রাজ্যে মুসলিমদের উপর অমানবিক নির্যাতন ও হত্যার নিন্দা জানিয়ে দোয়া চেয়েছেন। পুরো সীরত ময়দান আখেরী মোনাজাতে আমিন আমিন ধ্বনিতে মুখরিত ছিল।

সকাল থেকে আসতে থাকে ধর্মপ্রাণ মুসল্লীরা। আছরের নামাজের পর থেকে বাড়তে থাকে মানুষের ভিড়। এক সাথে জামায়াতে মাগরিবের নামাজ আদায় করেছে লাখো মুসল্লি। ১৩ একর বিশাল মাঠ পরিপূর্ণ। আসরের নামাজের আগে তকরির পেশ করেন চট্টগ্রামের ধনিয়ালা পাড়াস্থ বায়তুশ শরফ ইসলামিয়া কামিল মাদ্াসার অধ্যক্ষ মাওলানা সাইয়িদ আবু নোমান। বাদে মাগরিব থেকে তাকরির পেশ করছেন বায়তুশ শরফের পীর বাহরুল উলুম শাহ মাওলানা কুতুব উদ্দিন।

ইসলামী আরবী বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য প্রফেসর ড. মাওলানা আহসান সাইয়িদ বলেছেন, অন্ধকার যুগে রাসুল (স.) এসে মানবজাতিকে আলোর দিশা দেখিয়েছিলেন। তাঁর দেখানো পথেই মানুষ মুক্তির সন্ধান পায়। এ জন্য রাসুল (স.) কে করতে হয়েছে কঠোর পরিশ্রম। আইয়ামে জাহেলিয়াতের যুগকে তিনি সোনালী যুগে পরিণত করতে সক্ষম হন। আজকে মুসলমানরা ইসলাম থেকে অনেক দুরে সরে আসার কারণেই বিশ্বময় মুসলমানরা নির্যাতিত হচ্ছে।

বায়তুশ শরফের পীর বাহরুল উলুম হযরত শাহ মাওলানা কুতুব উদ্দিন বলেছেন, ইসলামকে পরিপূর্ণ জীবন ব্যবস্থা হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করার জন্যই রাসুল (সা.) কে আল্লাহ রাব্বুল আলামিন দুনিয়াতে প্রেরণ করেছিলেন। আর এ দ্বীন পরিপূর্ণ জীবন বিধান হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করতে গিয়ে বাতিলদের অসংখ্য আঘাত সহ্য করতে হয়েছে। শত কষ্ট ও প্রতিকুল পরিবেশ পরিস্থিতি মোকাবেলা করেই তিনি ইসলামকে একটি পরিপূর্ণ জীবন বিধান হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করতে পেরেছেন।

শেষ অধিবেশনে তকরির পেশ করেন যথাক্রমে উত্তর বাড্ডা কামিল মাদ্রাসা মসজিদের খতিব মাওলানা জাকারিয়া আল-হোছাইনি, চুনতি হাকিমিয়া আলিয়া মাদ্রাসার মুহাদ্দেস মাওলানা শাহ আলম, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ড. মাওলানা গিয়াস উদ্দিন তালুকদার, বায়তুল মোকাররম জাতীয় মসজিদের জুমাপূর্ব আলোচক মাওলানা খন্দকার মাহবুবুল হক, বিশিষ্ট আলেমেদ্বীন আলহাজ্ব মাওলানা কাজী নাছির উদ্দিন ও অধ্যাপক হাফেজ মাওলানা শহীদুল ইসলাম বারাকাতী। সমাপনি তকরির শেষে সীরত মাহফিলে আগত মুসল্লীদের উদ্দেশ্যে স্বাগত বক্তব্য রাখেন শাহ সাহেব কেবলার দৌহিদ্র শাহজাদা মাওলানা আবদুল মালেক ইবন দিনার নাজাত। মাহফিলে সদর শেষে মোনাজাত পরিচালনা করেন অধ্যাপক হাফেজ মাওলানা শহীদুল ইসলাম বারাকাতী।

সমাপনী দিবসের পৃথক ৪টি অধিবেশনে সভাপতিত্ব করেন যথাক্রমে চুনতীর আলহাজ্ব মাওলানা মাহফুজুর রহমান ছিদ্দিকী, সিতাকুন্ড কামিল মাদ্াসার শায়খুল হাদিস আলহাজ মাওলানা হোছাইন আহমদ, লোহাগাড়া উপজেলার ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান অধ্যাপক নুরুল আবছার চৌধুরী।

১৯ দিনব্যাপী সীরত মাহফিল পরিচালনা করেন, চুনতি হাকিমিয়া আলিয়া মাদ্রাসার অধ্যক্ষ মাওলানা হাফিজুল হক নিজাম ও মুহাদ্দেছ ফারুক হোসাইন।

মাহফিল কর্তৃপক্ষ ও পুলিশ সূত্র জানায়, মাহফিল কর্তৃপক্ষের পক্ষ থেকে অন্তত ৪ হাজার স্বেচ্ছাসেবক নিয়োজিত রয়েছে। আর পুলিশ সদস্য রয়েছে ৪০ জন। তারা সকলে একটি টিম ওয়ার্কের মাধ্যমে শৃঙ্খলার দায়িত্ব পালন করছেন বলে জানালেন মাহফিল পরিচালনা কমিটির সদস্য শাহজাদা তৈয়বুল হক বেদার। লোহাগাড়া থানার এসআই জাকির সিকদার বলেন, থানার অফিসার ইনচার্জ মোহাম্মদ শাহজাহান পিপিএম (বার) এর নেতৃত্বে ৪০ জন পুলিশ কাজ করছে। মাহফিলে সাতকানিয়া সার্কেলের এএসপি মফিজ উদ্দিন উপস্থিত ছিলেন। তাছাড়া মাহফিল কর্তৃপক্ষ ক্লোজ সার্কিট ক্যামেরার মাধ্যমে মাহফিলের কার্যক্রম তদারিক করছে।

পাঠকের মতামত: